হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, যিল হজ্জ্ মাস মুসলিম উম্মাহর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ও ঈদ সমূহের মাস । ১লা যিল হজ্জ্ হযরত ইব্রাহীম খলিলের ( আ.) শুভ জন্মদিন এবং শেইখাইনের রিওয়ায়ত অনুসারে হযরত আমীরুল মুমিনীন আলীর (আ.) সাথে হযরত ফাতিমার ( আ.) শুভ বিবাহের দিন , ৭ যিল হজ্জ্ মহানবীর ( সা.) পবিত্র আহলুল বাইতের (আ.) মাসূম ১২ ইমামের ৫ম ইমাম হযরত মুহাম্মদ আল বাক্বিরের ( আ.) শাহাদাত দিবস , ৮ যিল হজ্জ্ তার্ভিয়ার দিবস : এ দিবস অত্যন্ত ফযীলত ও মর্তবার অধিকারী । রিওয়ায়তে বর্ণিত হয়েছে যে এ দিবসের রোযা ৬০ বছরের কাফফারা স্বরূপ এবং শেইখে শহীদ এ দিবসের গোসল মুস্তাহাব বলে বিবেচনা করেছেন ।
এ দিন ৮ যিল হজ্জ্ ৬০ হিজরী সালে ইমাম হুসাইন (আ.) পবিত্র মক্কা থেকে কূফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন । আর এ দিনই কূফায় প্রেরিত ইমাম হুসাইনের (আ.) দূত ও প্রতিনিধি হযরত মুসলিম ইবনে আক্বীল কূফায় পাপিষ্ঠ ইয়াযীদের নিযুক্ত শাসনকর্তা উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ ইবনে আবিহীর বিরুদ্ধে কিয়াম ও গণ অভ্যুত্থান করেন এবং ৯ যিল হজ্জ্ ইবনে যিয়াদের নির্দেশে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা ও শহীদ করা হয় । তাই মূলতঃ ১০ মুহররম আশুরার দিবসে কারবালায় ইমাম হুসাইনের (আ.) কিয়াম ও বিপ্লবের সূচনা এই ৮ যিল হজ্জ্ ৬০ হিজরী ।।
৯ যিল হজ্জ্ আরাফাত দিবস এবং কূফায় ইমাম হুসাইনের (আ.) দূত ও প্রতিনিধি মুসলিম ইবনে আক্বীলের শাহাদাত দিবস ,
১০ যিল হজ্জ্ ঈদুল আযহা ( আল্লাহর রাহে ত্যাগ তিতীক্ষা ও কুরবানীর মহোৎসব ) , ১৫ যিল হজ্জ্ মহানবীর ( সা :) পবিত্র আহলুল বাইতের ( আ:) ১২ ইমামের দশম মাসূম ইমাম আলী ইবনে মুহাম্মাদ আন- নাকী আল - হাদীর শুভ জন্ম দিবস , ১৮ যিল হজ্জ্ ঈদ - ই গাদীর - ই খুম , ২০ যিল হজ্জ্ আহলুল বাইতের ৭ম মাসূম ইমাম মূসা ইবনে জাফার আল - কাযিম ( আ.) - এর শুভ জন্মদিন , ২৪ যিল হজ্জ্ মুবাহালার দিবস ( ঈদ - ই মুবাহালা যে সম্পর্কে "ঐতিহাসিক মুবাহালা ও মহানবীর সা . প্রকৃত আহলুল বাইতের আ পরিচয় " - এ প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে । ) , এ দিন ২৪ যিল হজ্জ্ মহানবী ( সা:) নাজরানের খ্রীষ্টানদের সাথে মুবাহালা করার আগে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) , হযরত ফাতিমা ( আ.) , ইমাম হাসান ( আ.) ও ইমাম হুসাইন ( আ.)কে একটি চাদরের নীচে প্রবেশ করিয়ে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বললেন : " হে পরওয়ারদেগার ! প্রত্যেক নবীরই আহলুল বাইত ছিল যারা ছিল সবচেয়ে বিশেষ সৃষ্টি ( খাল্ক্ বা মখলূক ) । হে আল্লাহ ! এঁরা - আলী , ফাতিমা , হাসান ও হুসাইন - আমার আহলুল বাইত ; অতএব এঁদের থেকে সব ধরণের সংশয় সন্দেহ ( শক্ক্ ) ও পাপ ( গুনাহ ) দূর করে এদেরকে পবিত্র করার মতো ( সম্পূর্ণ ) পবিত্র ( তাত্হীর ) করে দিন । " ঠিক এর পরপরই হযরত জিবরাঈল ( আ.)
তাত্হীরের আয়াত ( সূরা - ই আহযাবের ৩৩ নং আয়াত : " নিশ্চয়ই আল্লাহ চান হে আহলুল বাইত তোমাদের থেকে পাপ পঙ্কিলতা - রিজস - দূর করতে এবং তোমাদের কে পবিত্র করার মতো ( পূর্ণ রূপে ) পবিত্র ( তাত্হীর ) করতে । " নিয়ে অবতীর্ণ ( নাযিল ) হন । এরপর মহানবী (সা.) এই চারজনকে নিয়ে মুবাহালার জন্য বের হন । তাই যখন নজরানের খ্রীষ্টান প্রতিনিধি দল এদেরকে দেখতে পেল এবং রাসূলুল্লাহর (সা:) হক্কানীয়ত ( সত্যতা ) ও মহানবীর (সা:) নুবুওয়ত অস্বীকারকারীদের উপর ঐশ্বরিক ( ইলাহী ) আযাব অবতীর্ণ ( নাযিল )
হওয়ার আলামত ও লক্ষণসমূহ প্রত্যক্ষ ( মুশাহাদা ) করল তখন তারা মুবাহালা করার সাহস করে নি বরং তারা সন্ধিচুক্তি ও জিযিয়া কর প্রদান করার প্রস্তাব দেয় ।
এ দিন ( ২৪ যিল হজ্জ্ ) আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) নামাযের রুকূতে ভিক্ষুককে আংটি দান করলে নিশ্চয়ই তোমাদের ওয়ালী ( সার্বিক তত্ত্বাবধান কারী ও অভিভাবক ) হচ্ছেন আল্লাহ , তাঁর রসূল এবং যারা ঈমান এনেছে তারা ( মুমিনগণ ) যারা নামায কায়েম করে এবং রুকূরত অবস্থায় যাকাৎ দেয় ।" - এ আয়াত ( বেলায়তের আয়াত ) অবতীর্ণ ( নাযিল ) হয় ।
মুবাহালার দিবসের কতিপয় আমল নীচে উল্লেখ করা হল : ১. মুস্তাহাব গোসল , ২. রোযা , ৩ . সময় , পদ্ধতি ও সওয়াবের দিক থেকে ঈদ - ই গাদীর দিবসের নামাযের সদৃশ দু ' রাকাত নামায এবং মুবাহালার নামাযে আয়াতুল কুরসি হুম ফীহা খালিদূন্ পর্যন্ত পড়তে হবে , ৪ . দুআ - ই মুবাহালা পাঠ যা রমযান মাসের দুআ - ই সাহারের অনুরূপ ( মাফাতীহুল জিনান গ্রন্থে মুবাহালার দিবসের দুআ বর্ণিত হয়েছে । ) ৫. শেখ ও সাইয়েদ দুরাকাত নামায ও ৭২ বার ইস্তিগফার করার পর যে দুআ রিওয়ায়ত করেছেন তা পাঠ করা এবং এ দুআর শুরু তে রয়েছে : আল হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন্ ।
এ দিন প্রত্যেক মুমিন নর নারীর
মওলা আমীরুল মুমিনীন হযরত আলীর (আ.) অনুসরণ করে ফকীর মিসকীনদের দান সদকা করা খুবই পছন্দনীয় ও মুস্তাহাব।
এ দিন হযরত আলীর (আ.) যিয়ারত করা অত্যন্ত পছন্দনীয় ও মুস্তাহাব এবং সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে যিয়ারত - ই জামিয়া পাঠ ।
২৫ যিল হজ্জ্ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদা সম্পন্ন দিবস । যেহেতু আহলুল বাইত (আ.)ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আ.) জ্বর থেকে সুস্থ হলে নযর আদায় করার জন্য তিন দিন রোযা রাখেন কিন্তু এ তিন দিন তাঁরা তাঁদের ইফতারের খাবার মিসকীন , ইয়াতীম ও যুদ্ধবন্দীকে দিয়ে দেন এবং নিজেরা শুধু পানি পান করে ইফতার করেন সেহেতু তাঁদের শা'নে পবিত্র কুরআনের সূরা - ই ইনসান ( সূরা - ই দাহর : হাল আতা আলাল ইনসানি হীনুম মিনাদ দাহরি ... ) অবতীর্ণ হয় । তাই আহলুল বাইতের (আ.) অনুসারীদের জন্য শোভনীয় হচ্ছে এ দিবসগুলোয় বিশেষ করে ২৫ যিল হজ্জের রাতে নিজেদের মওলাদের আদর্শ অনুসরণ করে ফকীর , মিসকীন ও ইয়াতীমদের ইত্'আম ( আপ্যায়ন ) করা ও খাওয়ানো এবং এ দিন ( ২৫ যিল হজ্জ্ ) রোযা রাখা ।
যেহেতু কোনো কোনো আলেমের মতে ২৫ যিল হজ্জ্ মুবাহালার দিবস সেহেতু এ দিন যিয়ারত - ই জামিয়া ও মুবাহালার দুআ পড়া যথার্থ ( মুনাসিব ) ।
যিল হজ্জ্ মাসের শেষ দিনের আমল পরবর্তীতে বর্ণনা করা হবে ।
সংগ্রহে : মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান